ঘুরে আসুন ষাট গম্বুজ মসজিদ
আপলোড সময় :
০৭-০৯-২০২৪ ০১:২৩:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৭-০৯-২০২৪ ০১:২৩:২৭ অপরাহ্ন
ষাট গম্বুজ মসজিদ। সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
বাংলা স্কুপ, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪:
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের তিনটি বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি। এটি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত পঞ্চদশ শতকের একটি ইসলামিক নিদর্শন। রাজধানী ঢাকা থেকে এর অবস্থান ১৭৫ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে। এটি বেঙ্গল সালতানাতের সময় সুন্দরবনের গভর্নর খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভগুলির একটি। ইউনেস্কো ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
কিভাবে যাবেন ষাট গম্বুজ মসজিদ
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত গ্রীন লাইন, ইমাদ, মেঘনা, বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহণের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ, কমফোর্ট লাইন, দোলা পরিবহন ও ইগল পরিবহণের গাড়ি ছাড়ে। এই বাসগুলোতে জনপ্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া লাগে। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়।
প্রবেশের টিকেট মূল্য
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকায় টিকেট করতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে প্রবেশ টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা। (সময়ের সাথে টিকেটের মূল্য পরিবর্তনযোগ্য)
ষাট গম্বুজ মসজিদ খোলা ও বন্ধের সময়
রবিবার পূর্ণ দিন মসজিদটি বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় বেলা ২.০০ থেকে। গরমকালে খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫ টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত মসজিদটি বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে থেকে ৩ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মসজিদটি বন্ধ থাকে।
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই, তবে মাঝারি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেও থাকার জন্য খোঁজ নিতে পারেন। আর বাগেরহাট থেকে খুলনা কাছে বলেই, চাইলে খুলনা গিয়েও কোন আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন।
খাবার সুবিধা
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে। তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নিন।
ষাট গম্বুজ মসজিদের গঠন ও বিবরণ
মসজিদটি বাইরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট লম্বা। আর ভিতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪৩ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮ ফুট লম্বা। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে ১১ টি বিরাট খিলানযুক্ত দরজা। অন্য দরজাগুলো থেকে মাঝখানের দরজাটি সবচেয়ে বড়। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে দরজা আছে ৭টি করে ১৪ টি। মসজিদের চারকোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের চূঁড়ায় রয়েছে একটি করে গোলাকার গম্বুজ। ছাদের কার্নিশের চেয়ে মিনারগুলোর উচ্চতা একটু বেশি।
মসজিদের সামনের দিকের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা এবং অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা। মিনারের ভেতরে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি, আগে এই মিনার থেকে আযান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। মসজিদের অভ্যন্তরে মোট ষাটটি স্তম্ভ বা পিলার আছে। স্তম্ভগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ৬ সারিতে মোট ১০টি করে বিন্যস্ত আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথরের তৈরী তবে ৫ টি স্তম্ভ ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। স্তম্ভগুলোর চারপাশের ছাদের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। ষাট গম্বুজ মসজিদে ১১ টি সারিতে সর্বমোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। আর মিনারের উপর চারটি গম্বুজ সহ মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১ টি। মসজিদের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে সাতটি গম্বুজ ছাড়া বাকি ৭৪ টি গম্বুজই অর্ধগোলাকার।
মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাব আছে ১০ টি। মাঝখানের মিহরাবটি বড় ও কারুকার্যপূর্ণ। দক্ষিণ দিকে ৫ টি এবং উত্তর দিকে ৪টি মিহরাব রয়েছে। উত্তর পাশে ১ টি মিহরাবের স্থলে ১ টি ছোট দরজা আছে। অনেকের মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন আর এই দরজা ছিল তার প্রবেশ পথ। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনির মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।
ষাট গম্বুজ মসজিদের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
বাগেরহাট জাদুঘর
খান জাহান আলীর মাজার
মোংলা বন্দর
নয় গম্বুজ মসজিদ
শেখ মাহমুদ শাহ মসজিদ
বিবি বেগনী মসজিদ
চুনাখোলা মসজিদ
শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া
নিয়াজ মোরশেদ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স